অপরিকল্পিত নগরায়নের গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে শহরের মাঠ-ঘাট। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিবর্তন এসেছে মানুষের নিত্যকার জীবনবোধে। নগরায়ণের প্রভাবে মানুষ প্রতিদিন বিসর্জন দিচ্ছে নিজেদের নির্মল আনন্দগুলো। বাস্তুবাদী দুনিয়ায় মানুষ যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছে দিন দিন। তারই ধারাবাহিকতায় নিষ্পাপ শিশু-কিশোরদের জীবনকেও সংকীর্ণ করেছি আমরা। ফলে আজকের শিশু-কিশোররা বঞ্চিত হচ্ছে উল্লাস আনন্দ থেকে।
শহরের আবাসিক এলাকাগুলোতে কিছু মাঠ থাকলেও তা খুবই অপর্যাপ্ত।তবে বর্তমানে শহরগুলোতে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম নিয়ে খেলাধুলার জোন রয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল। শিশুদের এসব প্লে জোনে ছেড়ে দিয়ে বাবা-মা থাকে নিজের মতো করে। শিশুরা এই ধরনের ভার্চুয়াল গেম থেকে কী শিখছে, এগুলা আদৌ তার মানসিক বিকাশে উপযোগী কি-না তার কোনো তোয়াক্কা করছে না অনেক মা-বাবাই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক ধরনের খেলাধুলা লুপ্ত প্রায়। যে বয়সে শিশু কিশোদের ছোটাছুটি করার কথা খোলা প্রান্তরে, সাইক্লিং, সাঁতার কাটা, ঘুরাঘুরি, লাফালাফি, নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা; সে বয়সে তাদের সঙ্গ এখন মোবাইল, টিভি ও কম্পিউটার স্ক্রিন। আগে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কিশোররা কিনত সাদা স্ট্যাম্প, লাল ট্যাপ, সাদা বল আর বড় সাইজের রঙিন ফুটবল। শখের বাঁশি কিনত আর ফু ফু করে বাজিয়ে বাড়ি মাতাত। এখন টাকা বাঁচায় ভিডিও গেমসের জন্য। মোবাইল আর ইন্টারনেরটের এই সহজলভ্যতা শিশুদের যে কতভাবে ক্ষতি করে তার ইয়ত্তা নেই। পিতা-মাতাদের অনীহা এই ব্যাপারে লক্ষণীয়। শিশুকে বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা না করে দিয়ে বসিয়ে রাখে মোবাইল ইন্টারনেটের জগতে। ইন্টারনেটের এসব কার্যক্রম শিশুদের মস্তিষ্ককে বিকৃত করে দেয়। শারীরিক মানসিক সব ধরনের ক্ষতিসাধনে সক্ষম ইন্টারনেটের কার্যক্রমগুলো।
বাংলাদেশের শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠগুলোও অনেকখানি সীমিত। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা তথ্য থেকে জানা যায়, ঢাকার প্রায় ৯৫ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ নেই। অধিকাংশ প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ থাকে না। খেলাধুলার জন্য যেমন মাঠ নেই, বিনোদনের জন্যও উপযোগী কোনো কার্যক্রম থাকে না। আছে শুধু একঘেয়েমি পড়া। শহরের স্কুলগুলোর একঘেয়ে পড়াশোনা ও অসুস্থ প্রতিযোগিতা শিশুদের সুস্থ বিনোদনের অন্তরায়। ফলে শিশু-কিশোররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও উপযোগী খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তাই আমরা শিশু কিশোরদের শারীরিক ভাবে রক্ষা করতে হলে খেলাধুলার বিকল্পন অন্য কিছু নেই।